‘BOB’ এর নাম শুনেছেন আপনারা ?
বব হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র এনাউন্সড গ্রুপ যা হচ্ছে শুধুমাত্র 'গে' দের জন্য। জ্বী হ্যাঁ আপনারা ঠিক ই শুনেছেন, আমি ‘গে’ এর কথাই বলেছি। আমার এক পরিচিত ব্রিলিয়ান্ট বড় ভাই এর মারফতে এই গ্রুপ সম্পর্কে জানলাম। আমার ঐ বড় ভাই গে না হলেও তার একাডেমিক পারপাসে 'বাংলাদেশে গে' দের উপর একটা থিসিস করেছিল। তারই জের ধরে তিনি এই গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারে আরো বছর খানেক আগে। আর আজ জানলাম আমি...
এই হচ্ছে তাদের ফেইসবুক ঠিকানাঃ
http://www.facebook.com/BoBangladesh.LGBT
ওদের পেইজে এ যেয়ে দেখলাম, ২১০০ বেশী লাইক রয়েছে তাদের পেইজ এ। পেইজের একটু নিচে নামার পর দেখলাম ওদের ‘থিম’ বহন করা আরো কিছু পেইজ এর লিঙ্ক দেওয়া আছে। সেসব পেইজের কিছু কিছু ইমেজ রীতিমত গায়ে ‘কাটা’ দেওয়ার মতো। তাই আমি আর ওসব পেইজের ভিতরে যাওয়ার আর সাহস পেলাম না। বরং মূল পেইজেই ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম পেইজটার খুঁটিনাটি। গ্রুপটার বেশীরভাগ সদস্যদের কমেন্ট, স্ট্যাটাস পড়ে আমার মনে হলো যে তারা সবাই উচ্চবিত্তের ঘরের উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তি। দেখলাম ওরা প্রতি মাসে বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রাম করে থাকে। নতুন নতুন ‘গে’রা এসব প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে। এই ধরণের প্রোগ্রাম এর ধরণ ‘ফরমাল’ না বলে ‘ক্যাজুয়াল’ বলাটাই মনে হয় ঠিক হবে। কারণ ওরা এই ধরণের প্রোগ্রামের শুধু ভেন্যু ঠিক করে জানান দিয়ে দেয় তাদের পেইজের মাধ্যমে। তারপর বাকিরা ঐ ভেন্যুতে উপস্থিত হয়ে একটু চোখ কান খোলা রেখে বুঝে নেয় তাদের সদস্যদেরকে। BOB সম্ভবত সর্বশেষ প্রোগ্রামটি করেছে এ মাসের শুরুর দিকে। তাদের সেই ভেন্যু ছিল ‘ধানমন্ডি’ লেকে। আমার যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। দেখার ইচ্ছে ছিল একসাথে অনেক ‘গে’ কে।
আমি অবশ্য অনেক ‘গে’ এর আগে একসাথে না দেখলেও, আলাদা আলাদা ভাবে ৬ জন গে এর সাথে খুব ভালোভাবে পরিচত হয়েছিলাম। আজ আপনাদের তাদের মধ্য থেকে দুই জনের গল্প বলবো। ‘গে’ দের সাথে পরিচিত হবার নিষিদ্ধ দুটি গল্প...
আমি ছোট বেলা থেকেই সকল বিষয়ে কিউরিসিটি ফিল করি, জীবণে খুব কম জিনিস আছে যা আমার করা হয় নাই। আর যে সকল জিনিস এখনো করা হয় নাই তার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘গে’ দের সাথে সক্রিয় সম্পর্ক। তবে এই পর্যন্ত আমাকে ৬ জন গে ধরেছে বা প্রাথমিক পরিচয় হয়েছিল। তো আসুন আজ আপনাদেরকে বলি সে ৬ জন গে এর সাথে পরিচয় হউয়ার অভিজ্ঞতা।
১. কুহুঃ
২০০৫ সালের কথা। সময় তখন দিন-রাত ফ্রিতে মোবাইল ফোনে কথা বলার। আমি তখন ব্যবহার করতাম সিটিসেল মোবাইল। আপনারা যারা সেই সময় সিটিসেল ব্যবহার করেছেন, তারা নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন তখনকার রাতের বেলা ফ্রি মিনিটের উৎসবের কথা। আমিও বলতাম কথা অনেক রাত করে, অপরিচিত অনেকের সাথে... ফাউ আলাপ...
সেই সময় আরেকটি অফার সিটিসেল থেকে দেওয়া হয়েছিল, সেটা হচ্ছে ‘সিটিসেল আড্ডা’ (সম্ভবত এই নাম ই ছিল). এই আড্ডা তে আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করে চ্যাট এর স্ট্যাইলে মেসেজ করা যেত অপরিচিতদের সাথে। আমিও রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম, অতঃপর ‘কুহু’ নামের একজন আমাকে মেসেজ পাঠালো যে সে আমার ফ্রেন্ড হতে চায়। আমিও হলাম, কারণ নাম শুনে ভাবছিলাম সে একজন মেয়ে। কিন্তু না, সে মেয়ে না, সে হচ্ছে ছেলে এবং আদর করে সে নিজের নাম রেখেছে ‘কুহু’... তো মেসেজে মেসেজে চ্যাট-চ্যাট হতে হতে একসময় সে বলল ফোনে কথা বলার জন্য। আমিও বললাম ঠিক আছে, আপত্তি কিসের !! রাত দিন যেখানে ফ্রি তে কথা চালাচালি হচ্ছে নাম না জানা বিভিন্ন মানুষের সাথে, সেখানে একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। তাই প্রহর গুনতে থাকলাম রাত ১১ টার...
একসময় তার কল আসলো, অপরপ্রান্ত থেকে ‘কুহুর’ কন্ঠস্বর শোনার পর আমার জানি কেমন কেমন লাগলো গলাটা। আমি গলার স্বরটার মিলাতে পারছি ‘না পুরুষের’ সাথে ‘না মেয়েদের সাথে’...তাই অস্বস্থি নিয়ে কথা বলতে থাকলাম। সে তার নিজের সম্পর্কে বলছে অনেক কিছুই বলছে, কোথায় থাকে, কোন স্কুলে পড়েছে, কোন কলেজে, কি খেতে ভালোবাসে, এখন পড়ালেখা করছে ‘আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে’, আরো কত কি। কিন্তু সে একবারও বলল না সে কি মেয়ে না ছেলে, নাকি অন্যকিছু। আসলে কেউ কি আর নিজের জেন্ডার বলে আগ বাড়িয়ে! এটা কি বলার মতো কোনো ব্যাপার! সবাই তো ধরেই নেয় যে কন্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারে অপর প্রান্ত থেকে কে কথা বলছে। সমস্যা হলো আমি ধরতে পারছিলাম না। তাই আউলা মাথা নিয়েই কথা বলছিলাম। একসময় মাথায় আসলো, তাকে আমই তার পুরো নাম জিজ্ঞাসা করলেই তো জানতে পারব সে আসলে জিনিসটা কি। তাই জিজ্ঞাসা করলাম তার নাম। সে বলল, ‘ফুয়াদ রহমান’।
তা আমি বললাম ‘তাহলে কুহু বললেন যে!’।
ও বলল, ‘আদর করে সবাই আমাকে কুহু বলে ডাকে’।
এ কথা শোনার পর আমার মন খারাপ হলেও আমি কথা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। একসময় তার সাথে আমি ফ্রী হয়ে গেলাম। ও হ্যাঁ তাকে আমি মিথ্যা কথা বলেছিলাম কিছু। বলেছিলাম ‘আমি চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে পড়ি’, আসলে তখন আমি সবে মাত্র কলেজে উঠেছি। যাইহোক সে প্রতি রাতেই ফোন করতে লাগলো। একসময় সে আমাকে জানালো, সে নাকি ‘গে’। (আমার গে নিয়ে তখন হালকা, পাতলা ধারণা মাথায় ছিল, কিন্তু তখনও কারোও সাথে পরিচয় ছিল না)
আমি বললাম, ‘ও’।
সে বলল ‘চুপ করে গেলে যে!’
আমি বললাম, ‘তুমি এমন কিছুই বলো নাই যেটাতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতে হবে। গে হইতেই পারো। এটাতে আলাদা কি বিষয় হইলো !!। (আমি আসলে ভাব ধরার জন্য এই কথাটা বলেছিলাম, কারণ তখনও আমার ধারনা ক্লিয়ার না যে গে এর সংখ্যা কি হাতে গোণা নাকি প্রচুর। তাই আমাকে ভাব ধরতে হলো)।
সে তারপর বলল, ‘তাহলে আমাকে চুমো দিয়ে দাও তো’।
আমি মনে মনে বললাম, ‘হ্যাএ এ এ, খাইছে আমারে, অহন কিতা করতাম !!’ আর মুখে বললাম, ‘কোথায় চুমো দিয়ে দিবো বলো ?’
সে বলল, “কোথায় আবার! ঠোটে চুমো দিয়ে দাও”
আমি মনে মনে ভাবলাম, “শালার আমারার লগের পোলাপাইন ফোন সেক্স করে মাইয়াগো লগে, আর আমি এখানে চুম্মা দিমু এখন এক বেমাডা পোলারা। শালার কপাল আমার...” আর মুখে বললাম, “একটু দ্বারাও, আমি দড়জাটা বন্ধ করে আসছি” (আসলে দড়জা বন্ধই ছিলো, আমি যেটা করছিলাম সেটা হচ্ছে পিসি অন করেছিলাম। মনিকা বেলুচির একটা পিক বের কইরা আবার ফোনে গেলাম)
সে বলল, “কই !! আসো না...”
ফোনে শুরু হলো রসের আলাপ তার। একটু পর পর বলে চুমু দিয়ে দিতে। আমিও দিয়ে দেই। সে আমাকে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলে পড়নের শার্ট খোলার জন্য, আমি তাকে বলি হ্যাঁ ডার্লিং খুলেছি (আসলে হুদো), তারপর সে আমাকে বলে তোমার বুকে আমি হানি ঢালছি ডার্লিং, আমি বলি, “এতো ঢালছো কেন !! দুষ্টু কোথাকার...” আর মনে মনে কই “শালা হানি কি মাগনা পাইছস!! এদিকে মাইনসে খাওয়া পায় না, আর এই লুইচ্চায় হানি ঢালে...”
এভাবেই ১৫-২০ দিনের মতো ফোনে তাকে হুদাই আনন্দ দিতাম আমি। শুনেছি মানুষকে আনন্দ দেওয়ার মধ্যেও নাকি সোয়াব আছে। তাই আমিও সোয়াব কামাইতাম... আর ‘কুহু’ ও হানি ঢালতো...
.......................................................................................................................................
২. জাহাঙ্গীর গেঃ
আমার ধরণা কুমিল্লার পোলা পাইন সবাই জাহাঙ্গীর গে কে কম বেশী চিনে। আর তা চিনে শুধুমাত্র ফাহিমের কারণে।
ফাহিম হচ্ছে কুমিল্লা শহরের একজন খ্যাতিমান ব্যাক্তি, তাকে চিনে না এমন পাবিলিক কুমিল্লা শহরে আছে হাতেগোনা কয়েকজন। ফাহিমের ভাষ্যমতে কুমিল্লা শহরের ৬৭ ভাগ নারী নাকি তার সাথে বিছানা শেয়ার করেছে।
আমি বললাম, “তাহলে বাকি ৩৩ ভাগ কি দোষ করলো?”
সে তখন বলছিল, “বাকি ৩৩ ভাগ এর মধ্যে ২৫ ভাগ এর বয়স হইতেছে গিয়া তোর হয় ১৩ এর নিচে আর না হয় ৬০ এর উপরে”
“আর বাকি ৮ ভাগ ?”
সে তখন একটা মুচকি হাসি দিয়া বলছিল, “বাকি ৮ ভাগের মধ্যে ৫ ভাগ মাইয়া হইতেছে গিয়া তোর আমার আত্মীয় স্বজন, আর বাকি ৩ ভাগ হইতেছে তোর ‘প্রতিবন্ধী’, আর আমি প্রতিবন্ধীদের সাথে বিছানা শেয়ার করি না।“
এই হচ্ছে আমার বন্ধু ফাহিম, আর এর কল্যাণে আজ ‘জাহাঙ্গীর গে’ ও কুমিল্লা শহরে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। আর এই ‘জাহাঙ্গীর গে’ কে সে চিনেছে আমার মারফতে.....
জাহাঙ্গীর গে র প্রধান টার্গেট হচ্ছে কুমিল্লা জিলা স্কুলের কোমলমতি শিশুরা। আমারও তার সাথে পরিচয় স্কুলের সামনেই।
আমি কুমিল্লা জিলা স্কুলে ২০০০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ছিলাম। ম্যাট্রিক পাশ করার পর চাঁদপুরে দেশের বাড়িতে চলে আসি। এর পর মাঝে মধ্যে কুমিল্লায় যাওয়া হতো মায়ের সাথে। তবে অনেকদিনের জন্য একবার গিয়েছিলাম H.S.C পাশ করার পর। সেই চেনা শহর, চেনা অলি গলি... যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসি, বলছিলাম ‘জাহাঙ্গীর গে’ এর কথা।
দুপুর ১২ টার দিকে পুরনো সেই ‘স্কুল ছুটির’ দৃশ্যটি সচক্ষে দেখার জন্য গিয়েছিলাম জিলা স্কুলের সামনে। স্কুলের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সাদা শার্ট আর সাদা প্যান্টের সেই চিরচেনা ড্রেসগুলো। এমন সময় হোন্ডায় করে এক লোক এসে দাঁড়ায় আমার সামনে। আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি স্কুলের কারো জন্য অপেক্ষা করছি কিনা ? আমি বললাম হ্যাঁ, করছি। সে জানালো তারও ভাইগ্না নাকি এই স্কুলেই পড়ে। সে ও অপেক্ষা করছে। তো টুক টাক কথা বলার এক পর্যায়ে সে আমাকে বলে,
“স্কুল ছুটি হতে তো অনেক দেরি, চলো আমরা পার্কের থেকে একটা চক্কর দিয়ে আসি”
আমি একটু ভেবে বললাম, “চলুন”।
আপনারা হয়তো ভাবছেন, এতো সহজে চট করে একজন অপরিচিতর কথায় কেন রাজি হয়ে গেলাম। একজন অপরিচিত মানুষের কথায় চট করে রাজি হয়ে যাওয়ার পিছনে অবশ্য আমার একটা কারণ ছিলো। আর কারণটা হচ্ছে, সে আমাকে চিনতে না পারলেও, আমি তাকে চিনতে পেরেছিলাম ঠিকই। এই লোকটাই আমি ক্লাস নাইনে থাকতে পথের মাঝে আমাকে ধরেছিল একবার। আমি তখন ছিলাম সাইকেলে, আর সে তখন ছিল একটা মাইক্রোবাসে বসা। আমার স্পট মনে আছে, সে আমার নাম জিজ্ঞাসা করার পর আমাকে বলেছিল,
“তোমার মতো একটা ছোট ভাই আছে আমার, সে এখন বিদেশে থাকে, তোমারে দেইক্ষা আমার তার কথা মনে পরছে”।
আমি এর জবাবে কি বলেছিলাম আমার তা মনে নেই, তবে আমার যে প্রাইভেট কোচিং এর জন্য দেরি হচ্ছিল, তা স্পষ্টভাবে মনে আছে। তারপর টুক টাক কিছু কথা বলার পর সে আমাকে বলল
“মোবাইল ফোন নিবা নি ?”।
আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম, কারণ ২০০৩ সালের দিকে মোবাইল ফোনছিল গুটি কয়েক মানুষের কাছে। আর সেই সময়েই আমাকে সে মোবাইল অফার করাতে আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম...
তাই সে যখন আমাকে পার্কে যাওয়ার কথা বলেছিল, আমার মনে পরেছিল ঠিক সেই দিনের ঘটনাটি। ৯ এ পড়ার সেই সময়ের কথা আমার মাথায় কাজ করছিল ম্যাট্রিক পাশের পর জিলা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে। আর আমার সামনে দাড়িয়েছিল ‘জাহাঙ্গীর গে’, তাই কথা না বাড়িয়ে উঠে গিয়েছিলাম তার হোন্ডার পিছনে... সে আর কি ই বা করবে... কুমিল্লা শহরটা তো আমারই একটা অংশ।
হোন্ডায় যেতে যেতেই সে আমাকে বলে তার নাকি গাড়ির বিজনেস আছে। টাকা পয়সা নাকি ভালোই কামাইছে। এরপর ঈদ্গার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে আমাকে দেখাতে থাকে পার্ক করা তার মাইক্রোগুলো। (কুমিল্লা শহরের মাইক্রো এর পার্কিং স্ট্যান্ডটা ঈদ্গার পাশেই)... এরপর আমরা আসলাম পার্কে... পার্কে নিয়ে যাওয়ার পর সে আমাকে কোনো উথাই পাথাই না করে সরাসরি বলেছিল,
“আমার লগে করবা নি ? তোমারে আমি ৫ হাজার টাকা দিমু”।
(পার্কের মতো নির্জন জায়গায় এই কথা শোনার পর অন্য কেউ থাকলে হয়তো ভয় পেয়ে যেত, আমি একটুও পাইনি)...আমি ঠান্ডা মাথায় বলেছিলাম,
“কি করবো ?”
সে ততক্ষণে আমার হাতের মাসল টিপা শুরু করছে। সে এক টিপ মারে আমিও দেই দুই তিন লাফ... এক পর্যায়ে আমি তাকে বলি,
“আচ্ছা আমাকে চিন্তা করতে হবে, আপনি আপনার নাম্বারটা আমাকে দেন, আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করবো, এখন তো আমাকে স্কুলে যেতে হবে...”।
সে আমাকে বলে,
“আরে এখনকার সময়ে এডি কুনো ব্যাপারই না, মজা পাইবা তুমি। আমি কুয়েতে থাকতে কত করছি। তোমার ইচ্ছা হইলে করবা, না হইলে করবা না। তয় তোমারে আমার যেই ভালা লাগছে“ (এই কথা বলে সে আবার আমার হাত টিপা শুরু করছে)
আমি বললাম, “আচ্ছা আপনি আমাকে আপনার নাম্বার দেন, আমি আপনাকে কল করবো। আমার একজন পরিচিত আছে সে হয়তো করতে পারে”
সে বলে “না তুমি রাজি থাকলে, আমি তোমারেই করমু”
এরপর সে তখন তার ম্যানিব্যাগ থেকে একটা ছোট নোটবুক বের করে, বের করে আমার নাম্বার তার নোটবুকে টুকে রাখে, আর তার নাম্বার সে আমাকে দেয়। আমি তার নোটবুক দেখেই বুঝেছিলাম এখানে সে তার সব ভিক্টিমদের নাম্বার টুকে রেখেছে। যাইহোক সে আবার হোন্ডা স্টার্ট দেয়। আমি আবার তার হোন্ডার পিছনে উঠি। এবার সে হোন্ডা চালায় আর বাম হাত দিয়ে আমার বাম পাশের রানে টিপ মারতেছে... আমি পারিনা হুন্ডার থেকে লাপ মারি...
তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই এই কাহিনী আমি আমার বন্ধু শুভ্র আর ফাহিম কে বলি। বলার পর কেউ ই প্রাথমিক অবস্থায় আমার কথা বিশ্বাস করে নি। ফাহিম আমকে বলে,
“আরে বেডা আমারে ২০০০ দিলেই তো আমি কইরা ফেলতাম, কিতা আর ঢুকাইবো তে, তুই বেডা মিছা কাহিনী লইয়া আনছস আমরার কাছে”
আমি তখন ওদের সামনে লাউড স্পিকারে জাহাঙ্গীর গে রে ফোন করি। তাকে বলি যে আমার এক ফ্রেন্ড আছে যে কিনা আপনার প্রস্তাবে রাজি আছে... সে অপর প্রান্ত থেকে বলে
“আইচ্ছা আমারে আগে দেখা লাগবে তারে, সন্ধ্যার সময় তুমি তারে নিয়া আইসো ঈদগার সামনে”
আমি বললাম 'আচ্ছা... '
তারপর ঈদগায় তে কি হয়েছিল সেদিন তা আর আমি বলতে চাচ্ছি না... ঐটা ফাহিমই ভালো বলতে পারবে। কারণ সেদিন নির্জন এলাকায় আমি কি দেখেছিলাম সেটা শুধু আমিই জানি, আর ফাহিম কি অনুভব করেছিল ঐটা শুধু সে ই জানে..
বাকি ৪ জনের কথা পরে আরেকদিন বলবো... আজ আর না... দেখা হবে আবার যদি কিনা আমরা একই পথে থাকি...
বব হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র এনাউন্সড গ্রুপ যা হচ্ছে শুধুমাত্র 'গে' দের জন্য। জ্বী হ্যাঁ আপনারা ঠিক ই শুনেছেন, আমি ‘গে’ এর কথাই বলেছি। আমার এক পরিচিত ব্রিলিয়ান্ট বড় ভাই এর মারফতে এই গ্রুপ সম্পর্কে জানলাম। আমার ঐ বড় ভাই গে না হলেও তার একাডেমিক পারপাসে 'বাংলাদেশে গে' দের উপর একটা থিসিস করেছিল। তারই জের ধরে তিনি এই গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারে আরো বছর খানেক আগে। আর আজ জানলাম আমি...
এই হচ্ছে তাদের ফেইসবুক ঠিকানাঃ
http://www.facebook.com/BoBangladesh.LGBT
ওদের পেইজে এ যেয়ে দেখলাম, ২১০০ বেশী লাইক রয়েছে তাদের পেইজ এ। পেইজের একটু নিচে নামার পর দেখলাম ওদের ‘থিম’ বহন করা আরো কিছু পেইজ এর লিঙ্ক দেওয়া আছে। সেসব পেইজের কিছু কিছু ইমেজ রীতিমত গায়ে ‘কাটা’ দেওয়ার মতো। তাই আমি আর ওসব পেইজের ভিতরে যাওয়ার আর সাহস পেলাম না। বরং মূল পেইজেই ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম পেইজটার খুঁটিনাটি। গ্রুপটার বেশীরভাগ সদস্যদের কমেন্ট, স্ট্যাটাস পড়ে আমার মনে হলো যে তারা সবাই উচ্চবিত্তের ঘরের উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তি। দেখলাম ওরা প্রতি মাসে বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রাম করে থাকে। নতুন নতুন ‘গে’রা এসব প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে। এই ধরণের প্রোগ্রাম এর ধরণ ‘ফরমাল’ না বলে ‘ক্যাজুয়াল’ বলাটাই মনে হয় ঠিক হবে। কারণ ওরা এই ধরণের প্রোগ্রামের শুধু ভেন্যু ঠিক করে জানান দিয়ে দেয় তাদের পেইজের মাধ্যমে। তারপর বাকিরা ঐ ভেন্যুতে উপস্থিত হয়ে একটু চোখ কান খোলা রেখে বুঝে নেয় তাদের সদস্যদেরকে। BOB সম্ভবত সর্বশেষ প্রোগ্রামটি করেছে এ মাসের শুরুর দিকে। তাদের সেই ভেন্যু ছিল ‘ধানমন্ডি’ লেকে। আমার যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। দেখার ইচ্ছে ছিল একসাথে অনেক ‘গে’ কে।
আমি অবশ্য অনেক ‘গে’ এর আগে একসাথে না দেখলেও, আলাদা আলাদা ভাবে ৬ জন গে এর সাথে খুব ভালোভাবে পরিচত হয়েছিলাম। আজ আপনাদের তাদের মধ্য থেকে দুই জনের গল্প বলবো। ‘গে’ দের সাথে পরিচিত হবার নিষিদ্ধ দুটি গল্প...
আমি ছোট বেলা থেকেই সকল বিষয়ে কিউরিসিটি ফিল করি, জীবণে খুব কম জিনিস আছে যা আমার করা হয় নাই। আর যে সকল জিনিস এখনো করা হয় নাই তার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘গে’ দের সাথে সক্রিয় সম্পর্ক। তবে এই পর্যন্ত আমাকে ৬ জন গে ধরেছে বা প্রাথমিক পরিচয় হয়েছিল। তো আসুন আজ আপনাদেরকে বলি সে ৬ জন গে এর সাথে পরিচয় হউয়ার অভিজ্ঞতা।
১. কুহুঃ
২০০৫ সালের কথা। সময় তখন দিন-রাত ফ্রিতে মোবাইল ফোনে কথা বলার। আমি তখন ব্যবহার করতাম সিটিসেল মোবাইল। আপনারা যারা সেই সময় সিটিসেল ব্যবহার করেছেন, তারা নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন তখনকার রাতের বেলা ফ্রি মিনিটের উৎসবের কথা। আমিও বলতাম কথা অনেক রাত করে, অপরিচিত অনেকের সাথে... ফাউ আলাপ...
সেই সময় আরেকটি অফার সিটিসেল থেকে দেওয়া হয়েছিল, সেটা হচ্ছে ‘সিটিসেল আড্ডা’ (সম্ভবত এই নাম ই ছিল). এই আড্ডা তে আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করে চ্যাট এর স্ট্যাইলে মেসেজ করা যেত অপরিচিতদের সাথে। আমিও রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম, অতঃপর ‘কুহু’ নামের একজন আমাকে মেসেজ পাঠালো যে সে আমার ফ্রেন্ড হতে চায়। আমিও হলাম, কারণ নাম শুনে ভাবছিলাম সে একজন মেয়ে। কিন্তু না, সে মেয়ে না, সে হচ্ছে ছেলে এবং আদর করে সে নিজের নাম রেখেছে ‘কুহু’... তো মেসেজে মেসেজে চ্যাট-চ্যাট হতে হতে একসময় সে বলল ফোনে কথা বলার জন্য। আমিও বললাম ঠিক আছে, আপত্তি কিসের !! রাত দিন যেখানে ফ্রি তে কথা চালাচালি হচ্ছে নাম না জানা বিভিন্ন মানুষের সাথে, সেখানে একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। তাই প্রহর গুনতে থাকলাম রাত ১১ টার...
একসময় তার কল আসলো, অপরপ্রান্ত থেকে ‘কুহুর’ কন্ঠস্বর শোনার পর আমার জানি কেমন কেমন লাগলো গলাটা। আমি গলার স্বরটার মিলাতে পারছি ‘না পুরুষের’ সাথে ‘না মেয়েদের সাথে’...তাই অস্বস্থি নিয়ে কথা বলতে থাকলাম। সে তার নিজের সম্পর্কে বলছে অনেক কিছুই বলছে, কোথায় থাকে, কোন স্কুলে পড়েছে, কোন কলেজে, কি খেতে ভালোবাসে, এখন পড়ালেখা করছে ‘আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে’, আরো কত কি। কিন্তু সে একবারও বলল না সে কি মেয়ে না ছেলে, নাকি অন্যকিছু। আসলে কেউ কি আর নিজের জেন্ডার বলে আগ বাড়িয়ে! এটা কি বলার মতো কোনো ব্যাপার! সবাই তো ধরেই নেয় যে কন্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারে অপর প্রান্ত থেকে কে কথা বলছে। সমস্যা হলো আমি ধরতে পারছিলাম না। তাই আউলা মাথা নিয়েই কথা বলছিলাম। একসময় মাথায় আসলো, তাকে আমই তার পুরো নাম জিজ্ঞাসা করলেই তো জানতে পারব সে আসলে জিনিসটা কি। তাই জিজ্ঞাসা করলাম তার নাম। সে বলল, ‘ফুয়াদ রহমান’।
তা আমি বললাম ‘তাহলে কুহু বললেন যে!’।
ও বলল, ‘আদর করে সবাই আমাকে কুহু বলে ডাকে’।
এ কথা শোনার পর আমার মন খারাপ হলেও আমি কথা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। একসময় তার সাথে আমি ফ্রী হয়ে গেলাম। ও হ্যাঁ তাকে আমি মিথ্যা কথা বলেছিলাম কিছু। বলেছিলাম ‘আমি চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে পড়ি’, আসলে তখন আমি সবে মাত্র কলেজে উঠেছি। যাইহোক সে প্রতি রাতেই ফোন করতে লাগলো। একসময় সে আমাকে জানালো, সে নাকি ‘গে’। (আমার গে নিয়ে তখন হালকা, পাতলা ধারণা মাথায় ছিল, কিন্তু তখনও কারোও সাথে পরিচয় ছিল না)
আমি বললাম, ‘ও’।
সে বলল ‘চুপ করে গেলে যে!’
আমি বললাম, ‘তুমি এমন কিছুই বলো নাই যেটাতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতে হবে। গে হইতেই পারো। এটাতে আলাদা কি বিষয় হইলো !!। (আমি আসলে ভাব ধরার জন্য এই কথাটা বলেছিলাম, কারণ তখনও আমার ধারনা ক্লিয়ার না যে গে এর সংখ্যা কি হাতে গোণা নাকি প্রচুর। তাই আমাকে ভাব ধরতে হলো)।
সে তারপর বলল, ‘তাহলে আমাকে চুমো দিয়ে দাও তো’।
আমি মনে মনে বললাম, ‘হ্যাএ এ এ, খাইছে আমারে, অহন কিতা করতাম !!’ আর মুখে বললাম, ‘কোথায় চুমো দিয়ে দিবো বলো ?’
সে বলল, “কোথায় আবার! ঠোটে চুমো দিয়ে দাও”
আমি মনে মনে ভাবলাম, “শালার আমারার লগের পোলাপাইন ফোন সেক্স করে মাইয়াগো লগে, আর আমি এখানে চুম্মা দিমু এখন এক বেমাডা পোলারা। শালার কপাল আমার...” আর মুখে বললাম, “একটু দ্বারাও, আমি দড়জাটা বন্ধ করে আসছি” (আসলে দড়জা বন্ধই ছিলো, আমি যেটা করছিলাম সেটা হচ্ছে পিসি অন করেছিলাম। মনিকা বেলুচির একটা পিক বের কইরা আবার ফোনে গেলাম)
সে বলল, “কই !! আসো না...”
ফোনে শুরু হলো রসের আলাপ তার। একটু পর পর বলে চুমু দিয়ে দিতে। আমিও দিয়ে দেই। সে আমাকে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলে পড়নের শার্ট খোলার জন্য, আমি তাকে বলি হ্যাঁ ডার্লিং খুলেছি (আসলে হুদো), তারপর সে আমাকে বলে তোমার বুকে আমি হানি ঢালছি ডার্লিং, আমি বলি, “এতো ঢালছো কেন !! দুষ্টু কোথাকার...” আর মনে মনে কই “শালা হানি কি মাগনা পাইছস!! এদিকে মাইনসে খাওয়া পায় না, আর এই লুইচ্চায় হানি ঢালে...”
এভাবেই ১৫-২০ দিনের মতো ফোনে তাকে হুদাই আনন্দ দিতাম আমি। শুনেছি মানুষকে আনন্দ দেওয়ার মধ্যেও নাকি সোয়াব আছে। তাই আমিও সোয়াব কামাইতাম... আর ‘কুহু’ ও হানি ঢালতো...
.......................................................................................................................................
২. জাহাঙ্গীর গেঃ
আমার ধরণা কুমিল্লার পোলা পাইন সবাই জাহাঙ্গীর গে কে কম বেশী চিনে। আর তা চিনে শুধুমাত্র ফাহিমের কারণে।
ফাহিম হচ্ছে কুমিল্লা শহরের একজন খ্যাতিমান ব্যাক্তি, তাকে চিনে না এমন পাবিলিক কুমিল্লা শহরে আছে হাতেগোনা কয়েকজন। ফাহিমের ভাষ্যমতে কুমিল্লা শহরের ৬৭ ভাগ নারী নাকি তার সাথে বিছানা শেয়ার করেছে।
আমি বললাম, “তাহলে বাকি ৩৩ ভাগ কি দোষ করলো?”
সে তখন বলছিল, “বাকি ৩৩ ভাগ এর মধ্যে ২৫ ভাগ এর বয়স হইতেছে গিয়া তোর হয় ১৩ এর নিচে আর না হয় ৬০ এর উপরে”
“আর বাকি ৮ ভাগ ?”
সে তখন একটা মুচকি হাসি দিয়া বলছিল, “বাকি ৮ ভাগের মধ্যে ৫ ভাগ মাইয়া হইতেছে গিয়া তোর আমার আত্মীয় স্বজন, আর বাকি ৩ ভাগ হইতেছে তোর ‘প্রতিবন্ধী’, আর আমি প্রতিবন্ধীদের সাথে বিছানা শেয়ার করি না।“
এই হচ্ছে আমার বন্ধু ফাহিম, আর এর কল্যাণে আজ ‘জাহাঙ্গীর গে’ ও কুমিল্লা শহরে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। আর এই ‘জাহাঙ্গীর গে’ কে সে চিনেছে আমার মারফতে.....
জাহাঙ্গীর গে র প্রধান টার্গেট হচ্ছে কুমিল্লা জিলা স্কুলের কোমলমতি শিশুরা। আমারও তার সাথে পরিচয় স্কুলের সামনেই।
আমি কুমিল্লা জিলা স্কুলে ২০০০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ছিলাম। ম্যাট্রিক পাশ করার পর চাঁদপুরে দেশের বাড়িতে চলে আসি। এর পর মাঝে মধ্যে কুমিল্লায় যাওয়া হতো মায়ের সাথে। তবে অনেকদিনের জন্য একবার গিয়েছিলাম H.S.C পাশ করার পর। সেই চেনা শহর, চেনা অলি গলি... যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসি, বলছিলাম ‘জাহাঙ্গীর গে’ এর কথা।
দুপুর ১২ টার দিকে পুরনো সেই ‘স্কুল ছুটির’ দৃশ্যটি সচক্ষে দেখার জন্য গিয়েছিলাম জিলা স্কুলের সামনে। স্কুলের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সাদা শার্ট আর সাদা প্যান্টের সেই চিরচেনা ড্রেসগুলো। এমন সময় হোন্ডায় করে এক লোক এসে দাঁড়ায় আমার সামনে। আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি স্কুলের কারো জন্য অপেক্ষা করছি কিনা ? আমি বললাম হ্যাঁ, করছি। সে জানালো তারও ভাইগ্না নাকি এই স্কুলেই পড়ে। সে ও অপেক্ষা করছে। তো টুক টাক কথা বলার এক পর্যায়ে সে আমাকে বলে,
“স্কুল ছুটি হতে তো অনেক দেরি, চলো আমরা পার্কের থেকে একটা চক্কর দিয়ে আসি”
আমি একটু ভেবে বললাম, “চলুন”।
আপনারা হয়তো ভাবছেন, এতো সহজে চট করে একজন অপরিচিতর কথায় কেন রাজি হয়ে গেলাম। একজন অপরিচিত মানুষের কথায় চট করে রাজি হয়ে যাওয়ার পিছনে অবশ্য আমার একটা কারণ ছিলো। আর কারণটা হচ্ছে, সে আমাকে চিনতে না পারলেও, আমি তাকে চিনতে পেরেছিলাম ঠিকই। এই লোকটাই আমি ক্লাস নাইনে থাকতে পথের মাঝে আমাকে ধরেছিল একবার। আমি তখন ছিলাম সাইকেলে, আর সে তখন ছিল একটা মাইক্রোবাসে বসা। আমার স্পট মনে আছে, সে আমার নাম জিজ্ঞাসা করার পর আমাকে বলেছিল,
“তোমার মতো একটা ছোট ভাই আছে আমার, সে এখন বিদেশে থাকে, তোমারে দেইক্ষা আমার তার কথা মনে পরছে”।
আমি এর জবাবে কি বলেছিলাম আমার তা মনে নেই, তবে আমার যে প্রাইভেট কোচিং এর জন্য দেরি হচ্ছিল, তা স্পষ্টভাবে মনে আছে। তারপর টুক টাক কিছু কথা বলার পর সে আমাকে বলল
“মোবাইল ফোন নিবা নি ?”।
আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম, কারণ ২০০৩ সালের দিকে মোবাইল ফোনছিল গুটি কয়েক মানুষের কাছে। আর সেই সময়েই আমাকে সে মোবাইল অফার করাতে আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম...
তাই সে যখন আমাকে পার্কে যাওয়ার কথা বলেছিল, আমার মনে পরেছিল ঠিক সেই দিনের ঘটনাটি। ৯ এ পড়ার সেই সময়ের কথা আমার মাথায় কাজ করছিল ম্যাট্রিক পাশের পর জিলা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে। আর আমার সামনে দাড়িয়েছিল ‘জাহাঙ্গীর গে’, তাই কথা না বাড়িয়ে উঠে গিয়েছিলাম তার হোন্ডার পিছনে... সে আর কি ই বা করবে... কুমিল্লা শহরটা তো আমারই একটা অংশ।
হোন্ডায় যেতে যেতেই সে আমাকে বলে তার নাকি গাড়ির বিজনেস আছে। টাকা পয়সা নাকি ভালোই কামাইছে। এরপর ঈদ্গার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে আমাকে দেখাতে থাকে পার্ক করা তার মাইক্রোগুলো। (কুমিল্লা শহরের মাইক্রো এর পার্কিং স্ট্যান্ডটা ঈদ্গার পাশেই)... এরপর আমরা আসলাম পার্কে... পার্কে নিয়ে যাওয়ার পর সে আমাকে কোনো উথাই পাথাই না করে সরাসরি বলেছিল,
“আমার লগে করবা নি ? তোমারে আমি ৫ হাজার টাকা দিমু”।
(পার্কের মতো নির্জন জায়গায় এই কথা শোনার পর অন্য কেউ থাকলে হয়তো ভয় পেয়ে যেত, আমি একটুও পাইনি)...আমি ঠান্ডা মাথায় বলেছিলাম,
“কি করবো ?”
সে ততক্ষণে আমার হাতের মাসল টিপা শুরু করছে। সে এক টিপ মারে আমিও দেই দুই তিন লাফ... এক পর্যায়ে আমি তাকে বলি,
“আচ্ছা আমাকে চিন্তা করতে হবে, আপনি আপনার নাম্বারটা আমাকে দেন, আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করবো, এখন তো আমাকে স্কুলে যেতে হবে...”।
সে আমাকে বলে,
“আরে এখনকার সময়ে এডি কুনো ব্যাপারই না, মজা পাইবা তুমি। আমি কুয়েতে থাকতে কত করছি। তোমার ইচ্ছা হইলে করবা, না হইলে করবা না। তয় তোমারে আমার যেই ভালা লাগছে“ (এই কথা বলে সে আবার আমার হাত টিপা শুরু করছে)
আমি বললাম, “আচ্ছা আপনি আমাকে আপনার নাম্বার দেন, আমি আপনাকে কল করবো। আমার একজন পরিচিত আছে সে হয়তো করতে পারে”
সে বলে “না তুমি রাজি থাকলে, আমি তোমারেই করমু”
এরপর সে তখন তার ম্যানিব্যাগ থেকে একটা ছোট নোটবুক বের করে, বের করে আমার নাম্বার তার নোটবুকে টুকে রাখে, আর তার নাম্বার সে আমাকে দেয়। আমি তার নোটবুক দেখেই বুঝেছিলাম এখানে সে তার সব ভিক্টিমদের নাম্বার টুকে রেখেছে। যাইহোক সে আবার হোন্ডা স্টার্ট দেয়। আমি আবার তার হোন্ডার পিছনে উঠি। এবার সে হোন্ডা চালায় আর বাম হাত দিয়ে আমার বাম পাশের রানে টিপ মারতেছে... আমি পারিনা হুন্ডার থেকে লাপ মারি...
তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই এই কাহিনী আমি আমার বন্ধু শুভ্র আর ফাহিম কে বলি। বলার পর কেউ ই প্রাথমিক অবস্থায় আমার কথা বিশ্বাস করে নি। ফাহিম আমকে বলে,
“আরে বেডা আমারে ২০০০ দিলেই তো আমি কইরা ফেলতাম, কিতা আর ঢুকাইবো তে, তুই বেডা মিছা কাহিনী লইয়া আনছস আমরার কাছে”
আমি তখন ওদের সামনে লাউড স্পিকারে জাহাঙ্গীর গে রে ফোন করি। তাকে বলি যে আমার এক ফ্রেন্ড আছে যে কিনা আপনার প্রস্তাবে রাজি আছে... সে অপর প্রান্ত থেকে বলে
“আইচ্ছা আমারে আগে দেখা লাগবে তারে, সন্ধ্যার সময় তুমি তারে নিয়া আইসো ঈদগার সামনে”
আমি বললাম 'আচ্ছা... '
তারপর ঈদগায় তে কি হয়েছিল সেদিন তা আর আমি বলতে চাচ্ছি না... ঐটা ফাহিমই ভালো বলতে পারবে। কারণ সেদিন নির্জন এলাকায় আমি কি দেখেছিলাম সেটা শুধু আমিই জানি, আর ফাহিম কি অনুভব করেছিল ঐটা শুধু সে ই জানে..
বাকি ৪ জনের কথা পরে আরেকদিন বলবো... আজ আর না... দেখা হবে আবার যদি কিনা আমরা একই পথে থাকি...
0 comments:
Post a Comment