এনিমেশনের প্রতি আমার দূর্বলতা ছোট বেলা থেকেই। কখনো কাউকে এই কথা বলে হয়ে উঠেনি বা কেউ কখনো জানতে চায়নি... তাই হয়তো আমাকে পুরোপুরি কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে হয়েছে। তবে এনিমেশনের প্রতি দূর্বলতা থাকলেই যে কমার্স পড়া যাবে না, বিষয়টা আসলে তা না। যার ইচ্ছে থাকে, সে শর্ট কোর্স করেও নিজের প্রাথমিক জ্ঞান টা টুকে নিতে পারে যেকোনো বিষয়ে... তবে আমার ক্ষেত্রে তা ও কখনো হয়ে উঠেনি... এখন নিজে নিজে পরম বন্ধু ‘গুগলের’ সাহায্য নিয়ে একটু একটু করে শিখছি এনিমেশনের কাজ...।
তাই কাজ শিখার একাগ্রতা থেকেই হোক বা শর্টফিল্মের প্রতি ভালোবাসা থেকেই হোক, আমি প্রতিদিন প্রচুর শর্ট ফিল্ম নামাই। আর এগুলোর মধ্যে বেশীর ভাগ থাকে এনিমেশন বেইজড শর্টফিল্ম। কারণ আমার কাছে এনিমেশনের একটা আলাদা সংজ্ঞা আছে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি একজন মেকার বা পর্দার পিছনের কারিগর তার পুরো ইমাজিনেশন পাওয়ার যেরকম ভাবে এনিমেশন পিছনে লাগাতে পারে, সেরকম ভাবে পারে না মানুষ নির্ভর ফিল্মের ক্ষেত্রে। একজন পরিচালক হয়তো একটা সিনের জন্য বিভিন্ন ক্যারেকটারের মুভমেন্ট, এক্সপ্রেশন যেরকম ভাবে কল্পনা করে রেখেছিল সেরকম ভাবে শটে ফুটিয়ে তুলতে পারে না মানব নির্ভর ফিল্মে। কিন্তু এনিম্যেশন হচ্ছে আপনার হাতের পুতুল, আপনি যেরকম খুশী, যেভাবে খুশী, সেভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পারবেন আপনার ইমাজিনেশন পাওয়ার কে। আপনি যদি ‘Up’ মুভিটি দেখে থাকেন, তাহলে আপনাকে এনিম্যেশনের আরেকটি অনন্যগত সুবিধা সহজে বুঝানো যাবে। ‘Up’ মুভিটির প্রথম ১০ মিনিট দেখার পরপরই আপনি হয়তো আপনার দেখা সেরা শর্ট ফিল্মের তালিকায় এটাকে রাখবেন। ফেইসবুকে অনেককেই অনেকবারই ‘Up’ মুভির এই ১০ মিনিট এর সাথে ‘Twilight’ সিরিজের এর তুলনা করতে দেখেছি। তারা ‘Twilight’ পুরো সিরিজের প্রেম কাহিনী থেকে হাজার গুন এগিয়ে রেখেছে ‘Up’ এর ১০ মিনিটের সিনটিকে। রাখাটাই স্বাভাবিক।
তবে কি দেখিয়েছিল ওই ১০ মিনিটের সিনে ? কিছুই না... দুইজন ছোট ছেলে এবং মেয়ের শৈশবের একটি অদম্য ইচ্ছে পূরণের শখ, তরুণ বয়সে তাদের মধ্যকার প্রেমের সময়কার দিনগুলো, মধ্য বয়সের পাওয়া না পাওয়া অধ্যায় গুলো, আর শেষ বয়সে এসে জীবনের হিসাব মিলানোর টুকরো স্মৃতিগুলো... আর এ সব কিছুই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রথম ১০ মিনিটে। অসাধারণ এই সিনটি যে একবার দেখবে তার জন্য সিনটি ভুলে যাওয়া খুব কষ্টকর হবে। এখন বলি ঠিক কি কি কারণে এই সিনটি এতোটা ভালো হয়েছে...
প্রথমেই যে জিনিসটিকে এগিয়ে রাখতে হবে সেটা হচ্ছে, কনসেপ্ট। দূর্দান্ত কনসেপ্ট এর উপর সিনটি দাড় করানো হয়েছে।
দ্বিতীয়তো সিকোয়েন্স গুলো খুব ফাস্ট ফরওয়ার্ড হলেও একটা সিকোয়েন্সকেও আপনি খাপ ছাড়া বলতে পারবেন না।
৩য়তো, কেন খাপ ছাড়া লাগেনি একটি সিকোয়েন্সকেও ? এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে শৈশব থেকে একেবারে শেষ বয়স পর্যন্ত দুইজনের চেহেরা আপনার কাছে খাপ ছাড়া খাপ ছাড়া মনে হবে না। মনে হবে না যে বাছাই করা ছেলে মেয়েদের চেহারা সাদৃশ্যপূর্ণ রাখা কোনো সিন দেখছেন আপনি। আর কেন মনে হবে না, তার উত্তর একটাই...
আর একজন এনিমেটর এর শক্তি এখানটাতেই। অনেক পক পক করে ফেললাম, এবার আসেন এনিমেশন বেইজড তিনটি শর্টফিল্ম নিয়ে কথা বলি।
..............................................................
পরিচালকঃ Rodrigo Blaas
• Rodrigo Blaas কে চিনেন ? চিনেন না তাহলে ! আমিও চিনি না। তবে সে হচ্ছে Pixar এর একজন সাবেক এনিমেটর। Pixar কি জানেন তো ? Pixar হচ্ছে Steve Jobs এর গড়ে তোলা এনিমেশন স্টুডিও যেখান থেকে এই পর্যন্ত অস্কার জয় করা অনেক এনিমেশন মুভিই রিলিজ হয়েছে। সেসব মুভির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে Toy Story সিরিজ।
Alma শর্টফিল্মটি খুব একটা আহামরি না হলেও কনসেপ্টটা খুব ভালো লাগলো। আসলে গতানুগতিক ধারার বাহিরে যে কোনো কাজ দেখলেই আমার ভালো লাগে। আমার ধারণা এটা শুধু আমার সাথেই হয় না বরং বেশীরভাগ মানুষই এটা পছন্দ করে... শর্ট ফিল্মটিতে ‘Alma’ এর টাইটেল প্রেজেন্টেশন স্ট্যাইলটি বলতে গেলে এক কথা দূর্দান্ত। শর্টফিল্মটি শুরু হওয়ার পর পরই দেখতে পাবেন একটি ছোট্ট মেয়ে একটি নির্জন রাস্তার ‘ডল শপ’ এর বরফের আস্তন পরা আয়নার গ্লাসে নিজের নাম নাম লিখছে বড় বড় করে। এই সিনটি দিয়েই পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছে মেয়েটির নাম যে ‘Alma’। সাথে সাথে পরিচালক এটিও বুঝিয়ে দিয়েছে যে এটাই হচ্ছে শর্টফিল্মটির নাম।
শুরুতেই দেখবেন যে তুষারময় একটি দিনে Alma নামের একটি মেয়ে ডল শপের জানালায় নিজের নাম লিখার পর আবিষ্কার করে যে ঠিক তার মতোই দেখতে একটি পুতুল ‘ডল শপের’ ভিতরে অন্যান্য পুতুলগুলোর সাথে সাজানো রয়েছে। এটা দেখার পর তার মন চঞ্চল হয়ে উঠে। তবে সে পুতুল টিকে ধরে দেখার জন্য ডল শপে ঢোকার অনেক চেষ্টা করেও ঢুকতে পারে না। এক সময় হাল ছেড়ে দিয়ে সে যখন চলে আসতে থাকে তখন সে দড়জাটি খোলার আওয়াজ পায়। সে দোকানের ভিতরে ঢুকে কাউকেই দেখতে পায় না। সে তার দুরু দুরু বুকে নিজের মতো দেখতে পুতুলটির কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। সে যখন এগিয়ে যেতে থাকে তখন স্ক্রীণে দেখা যায় অন্যান্য পুতুল গুলো Alma এর দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে আছে। Alma ও এগিয়ে যেতে থাকে পুতুলটির দিকে...
শর্টফিল্মটির আলাদা একটা অর্থ আছে আমার কাছে। শর্টফিল্মটি দেখার পর আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা প্রত্যেকেই তো Alma এর মতো হাজার হাজার ফাঁদে পা দিচ্ছি। পা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝতেও পারি না যে ফাঁদটানা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে।
এখন দেখেন 'Alma' আপনাদের ভালো লাগে কিনা।
N.B. এই শর্টফিল্মে কিন্তু সূক্ষভাবে আরো কিছু মেসেজ দিয়েছে। ধরতে পারলে পুরষ্কার আছে।
..............................................................................................................................
A Short Love Story টিও অনেকটাই ‘UP’ মুভিটির প্রথম ১০ মিনিটের মতোই। কিন্তু তা কোনো নামকরা ব্যাক্তির করা কাজ না। শর্ট ফিল্মটি পরিচালনা করেছে Carlos Lascano। স্টপ মোশন এনিমেশনের মাধ্যমে শর্টফিল্মটি করা হয়েছে। স্টপ মোশন কি জানেন তো ? স্টপ মোশন হচ্ছে পুতুল নাচের ভিডিও এডিটিং ভার্সন। অর্থাৎ Frame by Frame এর শুট নেওয়া হয়েছে, যে কারণে দর্শকদের কাছে প্রতিটি অবজেক্টকেই জীবন্ত মনে হবে। আর পাশাপাশি মনে হবে যেন নিজ থেকেই অবজেক্ট গুলো মুভ করছে। আসলে মুভমেন্টের পিছনে কাজ করে frame by frame বা বায়োস্কোপ থিউরি। বায়োস্কোপ থিউরি এ জন্যে বললাম যাতে আপনার বুঝতে সুবিধা হয় যে আপনি কি উপায়ে ইলুউশন দেখছেন।
কাহিনী সংক্ষেপঃ কাহিনী কিছুই নাই। যা আছে তা হচ্ছে বোঝার ক্ষমতা। স্কুলে বসে থাকা একটি মেয়ের আঁকা পাখি কিভাবে আমাদের কে তার স্বপ্নের ভুবন থেকে ঘুড়িয়ে আনে, তা ই হচ্ছে এই শর্ট ফিল্মের মুখ্য বিষয়। আর কিছুই বলার নাই, বাকিডা সুযোগ থাকলে দেইক্ষা লন...
..........................................................................................................................................
আমার কাছে নির্বাক সব চলচিত্রই অন্যরকম লাগে। নির্বাক চলচিত্রে প্রাণ ঢুকানো পরিচালকদের জন্য বিশাল একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। পরিচালক কে প্রাণ ঢুকাতে হয় মাথা খাটিয়ে, ডায়লগ দিয়ে নয়। Thought of You শর্টফিল্মটা বানাতেও যে পরিচালক Ryan J Woodward কে ‘সেইরাম’ মাথা খাটানো লেগেছে, তা শর্টফিল্মটি দেখে আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। অবশ্য শর্টফিল্মটাকে পুরোপুরি ‘নির্বাক’ বলাটা ভুল হবে। এটাতে পরিচালক মিউজিক ব্যবহার করেছে। মিউজিক আর নাচের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে একজন ভাঙ্গা হৃদয়ের মানুষের মানসিক চঞ্চলতা বা অস্থিরতাকে। এই ধরণের অস্থিরতার মর্মার্থ হয়তো তারাই খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবে যাদের হৃদয় একবার হলেও ভেঙ্গেছিল। তারা হয়তো নিজেদের মানসিক অবস্থার সচিত্র মোশন দেখে চমকিত হবেন কিছুটা হলেও। আর এখানেই পরিচালকের সার্থকতা। Ryan J Woodward খুব সফলতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন একজন ব্যার্থ প্রেমিকের মানসিক অবস্থানটাকে।
কি করি আমরা প্রেমে ব্যার্থ হউয়ার পর, সারাটাক্ষণ শুধু চিন্তা করি হারানো মানুষটাকে। একটু পর পর শুধু তার কথাই মাথায় আসে। হাজার চেষ্টা করেও ওই চিন্তা গুলোকে যেমন বাস্তবতাতেও রূপান্তর করা যায় না, তেমনি সেই চিন্তাগুলোকে তাড়ানোও যায় না। একটু পর পর মাথায় এসে ভর করে শুধু। আবার যখন মাথায় থাকে না সেসব চিন্তা, আমরা আবারও ব্যাস্ত হয়ে যাই ওইসব চিন্তাগুলোকে জড়িতে ধরে বাঁচার জন্য। তবে সময় কি আর থেমে থাকে !! সময় যায়, চিন্তাও আস্তে আস্তে অপরিষ্কার হতে শুরু করে... একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে হারিয়ে যেতে থাকে অতল গহ্বরতে... তখন কি সেই সব ‘চিন্তা’ রও খারাপ লাগা শুরু করে ঐ ভাঙ্গা হৃদয়ের ব্যাক্তিটির জন্য ?
দেখা হবে আবার... যদি কিনা আমরা একই পথে থাকি...
তাই কাজ শিখার একাগ্রতা থেকেই হোক বা শর্টফিল্মের প্রতি ভালোবাসা থেকেই হোক, আমি প্রতিদিন প্রচুর শর্ট ফিল্ম নামাই। আর এগুলোর মধ্যে বেশীর ভাগ থাকে এনিমেশন বেইজড শর্টফিল্ম। কারণ আমার কাছে এনিমেশনের একটা আলাদা সংজ্ঞা আছে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি একজন মেকার বা পর্দার পিছনের কারিগর তার পুরো ইমাজিনেশন পাওয়ার যেরকম ভাবে এনিমেশন পিছনে লাগাতে পারে, সেরকম ভাবে পারে না মানুষ নির্ভর ফিল্মের ক্ষেত্রে। একজন পরিচালক হয়তো একটা সিনের জন্য বিভিন্ন ক্যারেকটারের মুভমেন্ট, এক্সপ্রেশন যেরকম ভাবে কল্পনা করে রেখেছিল সেরকম ভাবে শটে ফুটিয়ে তুলতে পারে না মানব নির্ভর ফিল্মে। কিন্তু এনিম্যেশন হচ্ছে আপনার হাতের পুতুল, আপনি যেরকম খুশী, যেভাবে খুশী, সেভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পারবেন আপনার ইমাজিনেশন পাওয়ার কে। আপনি যদি ‘Up’ মুভিটি দেখে থাকেন, তাহলে আপনাকে এনিম্যেশনের আরেকটি অনন্যগত সুবিধা সহজে বুঝানো যাবে। ‘Up’ মুভিটির প্রথম ১০ মিনিট দেখার পরপরই আপনি হয়তো আপনার দেখা সেরা শর্ট ফিল্মের তালিকায় এটাকে রাখবেন। ফেইসবুকে অনেককেই অনেকবারই ‘Up’ মুভির এই ১০ মিনিট এর সাথে ‘Twilight’ সিরিজের এর তুলনা করতে দেখেছি। তারা ‘Twilight’ পুরো সিরিজের প্রেম কাহিনী থেকে হাজার গুন এগিয়ে রেখেছে ‘Up’ এর ১০ মিনিটের সিনটিকে। রাখাটাই স্বাভাবিক।
তবে কি দেখিয়েছিল ওই ১০ মিনিটের সিনে ? কিছুই না... দুইজন ছোট ছেলে এবং মেয়ের শৈশবের একটি অদম্য ইচ্ছে পূরণের শখ, তরুণ বয়সে তাদের মধ্যকার প্রেমের সময়কার দিনগুলো, মধ্য বয়সের পাওয়া না পাওয়া অধ্যায় গুলো, আর শেষ বয়সে এসে জীবনের হিসাব মিলানোর টুকরো স্মৃতিগুলো... আর এ সব কিছুই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রথম ১০ মিনিটে। অসাধারণ এই সিনটি যে একবার দেখবে তার জন্য সিনটি ভুলে যাওয়া খুব কষ্টকর হবে। এখন বলি ঠিক কি কি কারণে এই সিনটি এতোটা ভালো হয়েছে...
প্রথমেই যে জিনিসটিকে এগিয়ে রাখতে হবে সেটা হচ্ছে, কনসেপ্ট। দূর্দান্ত কনসেপ্ট এর উপর সিনটি দাড় করানো হয়েছে।
দ্বিতীয়তো সিকোয়েন্স গুলো খুব ফাস্ট ফরওয়ার্ড হলেও একটা সিকোয়েন্সকেও আপনি খাপ ছাড়া বলতে পারবেন না।
৩য়তো, কেন খাপ ছাড়া লাগেনি একটি সিকোয়েন্সকেও ? এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে শৈশব থেকে একেবারে শেষ বয়স পর্যন্ত দুইজনের চেহেরা আপনার কাছে খাপ ছাড়া খাপ ছাড়া মনে হবে না। মনে হবে না যে বাছাই করা ছেলে মেয়েদের চেহারা সাদৃশ্যপূর্ণ রাখা কোনো সিন দেখছেন আপনি। আর কেন মনে হবে না, তার উত্তর একটাই...
“এনিমেশন”
আর একজন এনিমেটর এর শক্তি এখানটাতেই। অনেক পক পক করে ফেললাম, এবার আসেন এনিমেশন বেইজড তিনটি শর্টফিল্ম নিয়ে কথা বলি।
..............................................................
'Alma'
পরিচালকঃ Rodrigo Blaas
• Rodrigo Blaas কে চিনেন ? চিনেন না তাহলে ! আমিও চিনি না। তবে সে হচ্ছে Pixar এর একজন সাবেক এনিমেটর। Pixar কি জানেন তো ? Pixar হচ্ছে Steve Jobs এর গড়ে তোলা এনিমেশন স্টুডিও যেখান থেকে এই পর্যন্ত অস্কার জয় করা অনেক এনিমেশন মুভিই রিলিজ হয়েছে। সেসব মুভির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে Toy Story সিরিজ।
Alma শর্টফিল্মটি খুব একটা আহামরি না হলেও কনসেপ্টটা খুব ভালো লাগলো। আসলে গতানুগতিক ধারার বাহিরে যে কোনো কাজ দেখলেই আমার ভালো লাগে। আমার ধারণা এটা শুধু আমার সাথেই হয় না বরং বেশীরভাগ মানুষই এটা পছন্দ করে... শর্ট ফিল্মটিতে ‘Alma’ এর টাইটেল প্রেজেন্টেশন স্ট্যাইলটি বলতে গেলে এক কথা দূর্দান্ত। শর্টফিল্মটি শুরু হওয়ার পর পরই দেখতে পাবেন একটি ছোট্ট মেয়ে একটি নির্জন রাস্তার ‘ডল শপ’ এর বরফের আস্তন পরা আয়নার গ্লাসে নিজের নাম নাম লিখছে বড় বড় করে। এই সিনটি দিয়েই পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছে মেয়েটির নাম যে ‘Alma’। সাথে সাথে পরিচালক এটিও বুঝিয়ে দিয়েছে যে এটাই হচ্ছে শর্টফিল্মটির নাম।
শুরুতেই দেখবেন যে তুষারময় একটি দিনে Alma নামের একটি মেয়ে ডল শপের জানালায় নিজের নাম লিখার পর আবিষ্কার করে যে ঠিক তার মতোই দেখতে একটি পুতুল ‘ডল শপের’ ভিতরে অন্যান্য পুতুলগুলোর সাথে সাজানো রয়েছে। এটা দেখার পর তার মন চঞ্চল হয়ে উঠে। তবে সে পুতুল টিকে ধরে দেখার জন্য ডল শপে ঢোকার অনেক চেষ্টা করেও ঢুকতে পারে না। এক সময় হাল ছেড়ে দিয়ে সে যখন চলে আসতে থাকে তখন সে দড়জাটি খোলার আওয়াজ পায়। সে দোকানের ভিতরে ঢুকে কাউকেই দেখতে পায় না। সে তার দুরু দুরু বুকে নিজের মতো দেখতে পুতুলটির কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। সে যখন এগিয়ে যেতে থাকে তখন স্ক্রীণে দেখা যায় অন্যান্য পুতুল গুলো Alma এর দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে আছে। Alma ও এগিয়ে যেতে থাকে পুতুলটির দিকে...
শর্টফিল্মটির আলাদা একটা অর্থ আছে আমার কাছে। শর্টফিল্মটি দেখার পর আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা প্রত্যেকেই তো Alma এর মতো হাজার হাজার ফাঁদে পা দিচ্ছি। পা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝতেও পারি না যে ফাঁদটানা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে।
এখন দেখেন 'Alma' আপনাদের ভালো লাগে কিনা।
N.B. এই শর্টফিল্মে কিন্তু সূক্ষভাবে আরো কিছু মেসেজ দিয়েছে। ধরতে পারলে পুরষ্কার আছে।
..............................................................................................................................
A Short Love Story
A Short Love Story টিও অনেকটাই ‘UP’ মুভিটির প্রথম ১০ মিনিটের মতোই। কিন্তু তা কোনো নামকরা ব্যাক্তির করা কাজ না। শর্ট ফিল্মটি পরিচালনা করেছে Carlos Lascano। স্টপ মোশন এনিমেশনের মাধ্যমে শর্টফিল্মটি করা হয়েছে। স্টপ মোশন কি জানেন তো ? স্টপ মোশন হচ্ছে পুতুল নাচের ভিডিও এডিটিং ভার্সন। অর্থাৎ Frame by Frame এর শুট নেওয়া হয়েছে, যে কারণে দর্শকদের কাছে প্রতিটি অবজেক্টকেই জীবন্ত মনে হবে। আর পাশাপাশি মনে হবে যেন নিজ থেকেই অবজেক্ট গুলো মুভ করছে। আসলে মুভমেন্টের পিছনে কাজ করে frame by frame বা বায়োস্কোপ থিউরি। বায়োস্কোপ থিউরি এ জন্যে বললাম যাতে আপনার বুঝতে সুবিধা হয় যে আপনি কি উপায়ে ইলুউশন দেখছেন।
কাহিনী সংক্ষেপঃ কাহিনী কিছুই নাই। যা আছে তা হচ্ছে বোঝার ক্ষমতা। স্কুলে বসে থাকা একটি মেয়ের আঁকা পাখি কিভাবে আমাদের কে তার স্বপ্নের ভুবন থেকে ঘুড়িয়ে আনে, তা ই হচ্ছে এই শর্ট ফিল্মের মুখ্য বিষয়। আর কিছুই বলার নাই, বাকিডা সুযোগ থাকলে দেইক্ষা লন...
..........................................................................................................................................
‘Thought of You’
আমার কাছে নির্বাক সব চলচিত্রই অন্যরকম লাগে। নির্বাক চলচিত্রে প্রাণ ঢুকানো পরিচালকদের জন্য বিশাল একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। পরিচালক কে প্রাণ ঢুকাতে হয় মাথা খাটিয়ে, ডায়লগ দিয়ে নয়। Thought of You শর্টফিল্মটা বানাতেও যে পরিচালক Ryan J Woodward কে ‘সেইরাম’ মাথা খাটানো লেগেছে, তা শর্টফিল্মটি দেখে আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। অবশ্য শর্টফিল্মটাকে পুরোপুরি ‘নির্বাক’ বলাটা ভুল হবে। এটাতে পরিচালক মিউজিক ব্যবহার করেছে। মিউজিক আর নাচের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে একজন ভাঙ্গা হৃদয়ের মানুষের মানসিক চঞ্চলতা বা অস্থিরতাকে। এই ধরণের অস্থিরতার মর্মার্থ হয়তো তারাই খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবে যাদের হৃদয় একবার হলেও ভেঙ্গেছিল। তারা হয়তো নিজেদের মানসিক অবস্থার সচিত্র মোশন দেখে চমকিত হবেন কিছুটা হলেও। আর এখানেই পরিচালকের সার্থকতা। Ryan J Woodward খুব সফলতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন একজন ব্যার্থ প্রেমিকের মানসিক অবস্থানটাকে।
কি করি আমরা প্রেমে ব্যার্থ হউয়ার পর, সারাটাক্ষণ শুধু চিন্তা করি হারানো মানুষটাকে। একটু পর পর শুধু তার কথাই মাথায় আসে। হাজার চেষ্টা করেও ওই চিন্তা গুলোকে যেমন বাস্তবতাতেও রূপান্তর করা যায় না, তেমনি সেই চিন্তাগুলোকে তাড়ানোও যায় না। একটু পর পর মাথায় এসে ভর করে শুধু। আবার যখন মাথায় থাকে না সেসব চিন্তা, আমরা আবারও ব্যাস্ত হয়ে যাই ওইসব চিন্তাগুলোকে জড়িতে ধরে বাঁচার জন্য। তবে সময় কি আর থেমে থাকে !! সময় যায়, চিন্তাও আস্তে আস্তে অপরিষ্কার হতে শুরু করে... একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে হারিয়ে যেতে থাকে অতল গহ্বরতে... তখন কি সেই সব ‘চিন্তা’ রও খারাপ লাগা শুরু করে ঐ ভাঙ্গা হৃদয়ের ব্যাক্তিটির জন্য ?
দেখা হবে আবার... যদি কিনা আমরা একই পথে থাকি...
0 comments:
Post a Comment